সরকারি চাকরির কোটা সংস্কার আন্দোলনকে সরকারবিরোধী আন্দোলনের রূপ দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দাবিকে ‘বাংলাদেশের মানুষের দাবি’ হিসেবে বর্ণনা করে তাতে সংহতি জানিয়েছেন দেশের রপ্তানিমুখী বস্ত্র ও তৈরি পোশাক খাতের চার ডজন উদ্যোক্তা।
শনিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তারা বলেছেন, “যারা জীবন হারিয়েছেন এবং যারা হয়রানির মুখোমুখি হয়েছেন, তাদের প্রতি আমাদের গভীর দুঃখ ও সমবেদনা রয়েছে। সব জীবনই গুরুত্বপূর্ণ।”
‘দি নেক্সট জেনারেশন টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেল ইন্ডাস্ট্রিজ স্টেটমেন্ট অব সলিডারিটি’ শিরোনামের ওই বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাতের দ্বিতীয় প্রজন্মের ৪৮ জন উদ্যোক্তা।
এ তালিকায় রয়েছেন বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) ভাইস প্রেসিডেন্ট ফজলে শামীম এহসান ও ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সাবেক সভাপতি ও শাশা ডেনিমসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শামস মাহমুদের মত উদ্যোক্তারা।
ছাত্রদের ৯ দফা দাবির প্রেক্ষাপট ধরে এই বিবৃতি দেওয়া হয়েছিল, তবে শনিবার সন্ধ্যায় তাদের দাবি কমে এক দফায় এসেছে, সে প্রসঙ্গ ধরে শামস মাহমুদ বলেন, “সবার আগে দেশ। এই দেশকে বাঁচাতে হবে, তাহলে সবকিছুই বাঁচবে। আমরা নেক্সট জেনারেশন পোশাক খাতের উদ্যোক্তারা বাংলাদেশের মানুষের দাবির প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করছি, তাদের দাবি কি সেটা তারা জানাবে। সহিংসতায় হতাহতের ন্যায়বিচার চাই।’’
তিনি বলেন, “আমরা সহিংসতা চাই না। সবকিছু স্বাভাবিক হোক, নিরাপদ হোক। মানুষ শান্তি চায়, আমরাও শান্তি চাই।’’
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে শুরু হওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচি ঘিরে জুলাইয়ের মাঝামাঝি সময়ে শুরু হয় সহিংসতা। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষে গত ১৬ জুলাই থেকে এ পর্যন্ত দুই শতাধিক মানুষের মৃত্যুর খবর সংবাদমাধ্যমে এসেছে।
শনিবারও দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘাত, প্রাণহানি ঘটেছে। ঢাকায় বিশাল জমায়েত করে আন্দোলনকারীরা সরকার পতনের এক দফা দাবিতে ‘সর্বাত্মক অসহযোগের’ ঘোষণা দিয়েছে।
এর আগে শনিবার সকালে গণভবনে এক সভা থেকে আন্দোলনকারীদের আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু আন্দোলনকারীরা তাতে সাড়া দেয়নি।
বিকেএমইএ এর ভাইস প্রেসিডেন্ট ফজলে শামীম এহসান বলেন, “আমরা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যবসা করি। তাদের কাছেও আমাদের জবাবদিহি করতে হয়। সুশাসনের বিষয়ে আমাদের অবস্থান কী তা স্পষ্ট করতে হয়।’’
তিনি বলেন, “মৃত্যুর সংখ্যা কত তা বিবেচ্য বিষয় না। প্রতিটি মৃত্যুই কষ্টের, এত মৃত্যু দেখে আমরা চুপ থাকতে পারি না। সব মৃত্যুর নিরপেক্ষ ও সঠিক তদন্ত চাই। তাদের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হবে।
“আমরা অনেক কিছুই করছি, কিন্তু দেরিতে করা হচ্ছে। ছাত্রদের বোঝাতে হবে, তাদের আস্থায় নিয়ে ঘরে ফেরাতে হবে। জোর করে তাদের ঘরে ফেরানো যাবে না।”
ইংরেজি ভাষায় ৪৮ জন উদ্যোক্তার পাঠোনো বিবৃতিতে বলা হয়, “ব্যবসায়ী সমাজের সদস্য হিসেবে আমরা এই সময় চুপ থাকতে পারি না; নিরীহ মানুষের মৃত্যু দেখতে পারি না। মানুষের দাবি শোনা হচ্ছে না, সে বিষয়টিতে চুপ থাকতে পারি না।’’
বিরাজমান পরিস্থিতিতে মানুষের উদ্বেগের কথা তুলে ধরে বিবৃতিতে বলা হয়, “স্বাধীন জাতি হিসেবে আমরা বিশ্বাস করি, প্রত্যেক নাগরিক শান্তিপূর্ণভাবে নিজ নিজ অধিকার আদায়ের দাবি জানাতে পারবে।’’
চলমান আন্দোলন ও সহিংসতায় নিহতদের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করা হয় বিবৃতিতে। সেখানে বলা হয়, নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে দুস্কৃতকারীদের বিচারের আওতায় আনার উদ্যোগ দেখতে চান তারা।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, “প্রত্যেক জীবনই মূল্যবান– এই নীতিতে বিশ্বাস করে বলছি, গুরুত্ব দিয়ে হতাহতের ঘটনার বিচার ও অর্থনীতি পুণরুদ্ধারের দাবি করছি দেশ ও নাগরিকদের স্বার্থে।”
বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারীরা হলেন-
• ফজলে শামীম এহসান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, এরাফ কম্পোজিট লিমিটেড
• শামস মাহমুদ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, সাশা ডেনিমস লিমিটেড
• আবরার হোসেন সায়েম, পরিচালক, সায়েম ফ্যাশনস
• আল শাহরিয়ার আহমেদ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, আডজি ট্রিমস লিমিটেড
• হাসিন আরমান, পরিচালক, এমবি নিট
• রাফী মাহমুদ, পরিচালক, মাহমুদ ডেনিমস
• সাকিব আহমেদ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ব্রডওয়ে ইনকরপোরেশন
• আবরার আলম খান, পরিচালক, অ্যাস্ট্রোটেক্স গ্রুপ
• এম এহসানুল হক, পরিচালক, নিটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড
• জসিম উদ্দিন, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, আনাম গার্মেন্টস লিমিটেড
• লিথি মুনতাহা মহিউদ্দিন, পরিচালক, লিথি গ্রুপ
• জারীন রশিদ, পরিচালক, টিআরজেড ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড
• কাজী ফাহাদ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, কাজী অ্যাকসেসরিজ
• আকিব জাফরী শরীফ, পরিচালক, নর্দার্ন তসরিফা গ্রুপ
• রামিজে খালিদ ইসলাম, পরিচালক, রেনাই গ্রুপ
• আজফার অঙ্কন হাসান, পরিচালক, জায়ান্ট গ্রুপ
• সিফাত ইশতি, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, টেক্সটালিয়া লিমিটেড
• রিমনুল আলম সাদী, পরিচালক, ওল্ড টাউন ফ্যাশনস লিমিটেড
• ফারজাদ ইসলাম অন্তর, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, প্লাটিনাম সোর্সিং অ্যান্ড সার্ভিসেস লিমিটেড
• অভী বড়ুয়া চৌধুরী, নির্বাহী পরিচালক, জেমস ডিজাইন লিমিটেড
• মো. জুয়েল রানা, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ম্যাট্রিক্স অ্যাপারেল
• নিয়াজ রহমান সাকিব, পরিচালক, সিমটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড
• আহমেদ নাবিদ ইমতিয়াজ, পরিচালক, আন্দালিব টেক্সটাইলস মিলস
• লাবিবুর রহমান মালেক, পরিচালক, মডার্ন
• নাঈমুল হাসান নাঈম, পরিচালক, অ্যাবলুম ডিজাইন লিমিটেড
• রাজেশ সাহা, পরিচালক, রোজ স্যুয়েটারস লিমিটেড
• আনিকা বুশরা রাফা, পরিচালক, একেএইচ গ্রুপ
• ফজলে হোসেন আলিফ, লাম মিম অ্যাপারেলস
• জহীর আহমেদ শাহ, আহমেদ স্পিনিং লিমিটেড
• আশিকুল হক, আশিক টেক্সটাইলস লিমিটেড
• ওমর চৌধুরী, বঙ্গ গার্মেন্টস
• ইরফানুল হক, পরিচালক, ফতুল্লা ফেব্রিকস
• তানজিলা করিম, পরিচালক, ওডেল গ্রুপ
• তাসনিম সাদেক, পরিচালক, রোশাওয়া স্পিনিং
• জুবায়ের হোসেন আসিফ, পরিচালক, রোজ গার্ডেন অ্যাপারেল
• মোহাম্মদ ইকবাল হাসান, পরিচালক, ফেয়ার অ্যাপারেলস লিমিটেড
• তানভীর কাশেম, পরিচালক, একেএইচ গ্রুপ
• ওয়ায়েজা মাসনুন, পরিচালক, ক্লিফটন গ্রুপ
• আবরার রশিদ, সাত্তার টেক্সটাইল লিমিটেড
• শরীফ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ, রেহাশ অ্যাকসেসরিজ অ্যান্ড সোর্সিং লিমিটেডআরশাদ রহমান, পরিচালক, ফ্যারেল ফ্যাশনস লিমিটেড
• সুবায়েল সরওয়ার, পরিচালক, বিউটিফুল জ্যাকেটস লিমিটেড
• রাতুল দাস, পরিচালক, প্যারামাউন্ট গ্রুপ
• অপূর্ব সাহা, পরিচালক, পিএন কম্পোজিট লিমিটেড
• ফারহান আহমেদ, পরিচালক, প্যাকম্যান বাংলাদেশ লিমিটেড
• আয়েশা শেফা, পরিচালক, সিমকো স্পিনিং লিমিটেড
• জোবায়ের তানসিম আহমেদ, পরিচালক, শাহ ফতেউল্লাহ টেক্সটাইল মিলস লিমিটেড
• রাফিদ খান, পরিচালক, অ্যাসুরেন্স মনি গ্রুপ