বাংলাদেশের কোচ পদে থাকা চন্ডিকা হাথুরুসিংহেকে বিদায় করে দেওয়ার ঘোষণা দেওয়ার পর বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ সংবাদ সম্মেলনে জানিয়ে দিয়েছেন নতুন কোচের নামও। চ্যাম্পিয়নস ট্রফি পর্যন্ত বাংলাদেশ দলের কোচের দায়িত্ব পালন করবেন ফিল সিমন্স।
ফিল সিমন্স নামটা ক্রিকেটপ্রেমীদের কাছে পরিচিতই। তবে তা মূলত কোচ হিসেবে। নব্বই দশকে ক্রিকেটার হিসেবে আরও বেশি পরিচিত ছিলেন সাবেক এই ওপেনার। শুধু ওপেনার না বলে অলরাউন্ডারও বলতে পারেন। কারণ, মিডিয়াম পেস বোলিংটা মোটামুটি ভালোই করতেন। টেস্ট রেকর্ড অবশ্য তেমন আহামরি নয়। ২৬ টেস্টের ক্যারিয়ারে ৪৭ ইনিংসে বেশির ভাগ সময় ওপেনই করেছেন। ১ সেঞ্চুরি ও ৪টি ফিফটিসহ ২২.২৬ গড়ে করেছেন ১০০২ রান। বোলিংয়ে মাত্র ৪ উইকেট।
ওয়ানডেতে অবশ্য রেকর্ড বেশ ভালো। যেখানে তিনি সত্যিকার অলরাউন্ডার। ১৪৩ ম্যাচে ১৩৮ ইনিংসে ২৮.৯৩ গড়ে ৩৬৭৫ রান করেছেন। ৫ সেঞ্চুরি ও ১৮ ফিফটি। ১০৩ ইনিংসে বোলিং করে নিয়েছেন ৮৩ উইকেট। ৪.৪৪ ইকোনমি রেটে বোলিং করা সিমন্সের ইনিংসসেরা বোলিং সিডনিতে ১৯৯২ বেনসন–হেজেজ সিরিজে পাকিস্তানের বিপক্ষে। ১০–৮–৩–৪! ওয়ানডে ইতিহাসে এটি দ্বিতীয় সেরা কিপটে বোলিংয়ের রেকর্ড (ওভারপ্রতি ০.৩০ রান করে)। ওভারপ্রতি ০.২০ করে রান দিয়ে এ তালিকায় শীর্ষে অস্ট্রেলিয়ার শন অ্যাবোট (৫–৪–১–২)। তবে পুরো ১০ ওভারের বোলিং তালিকায় সিমন্সের ওই স্পেলই কিপটেমিতে সেরা।
২০১৪ সালে একইভাবে বল মাথায় লেগে মারা যান অস্ট্রেলিয়ার ওপেনার ফিল হিউজ। তাঁর মৃত্যুতে শোক জানিয়ে পরে প্রথম আলোর সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘আমাদের দুজনের নামে মিল আছে, আমার মাথায় বল লাগার সময় ওর মতোই আমার বয়সও ছিল ২৫। শুধু ভাবছিলাম, এতই যখন মিল আমার মতো হিউজও ফিরবে। ওর চলে যাওয়াটা আমাকে খুব নাড়িয়ে দিয়েছিল।’
ক্রিকেট ছাড়ার পর সিমন্সের কোচিং ক্যারিয়ার শুরু জিম্বাবুয়েতে হারারের একটি একাডেমিতে। এরপর ২০০৪ সালে জিম্বাবুয়ে কোচের দায়িত্ব পান। পরের বছর আগস্টে ছাঁটাই হওয়ার আগে নিউজিল্যান্ডের কাছে টেস্ট সিরিজ হারের পাশাপাশি বাংলাদেশে এসেও হেরেছিলেন সিমন্স। জিম্বাবুয়ে কোচের পদ থেকে ছাঁটাই হওয়ার পর দীর্ঘ বিরতি নেন সিমন্স।
২০০৭ বিশ্বকাপের পর দায়িত্ব নেন আয়ারল্যান্ডের। ২০১৫ সাল পর্যন্ত তাঁর অধীনে ২২৪ ম্যাচ খেলেছে আয়ারল্যান্ড, যা জাতীয় ক্রিকেট দলের প্রধান কোচ হিসেবে সবচেয়ে বেশি ম্যাচে দায়িত্ব পালনের রেকর্ড। সিমন্সের অধীনে আয়ারল্যান্ড এ সময়ে আইসিসির প্রতিটি ইভেন্টেই খেলার যোগ্যতা অর্জন করে। ২০১১ বিশ্বকাপে তাঁর সময়েই ইংল্যান্ডকে হারিয়েছিল আয়ারল্যান্ড। ৪ বছর পর ২০১৫ বিশ্বকাপে আইরিশদের ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারানোর সময়েও কোচ সিমন্স।
সিমন্স ঘরে ফেরেন ২০১৫ সালের মার্চে। দায়িত্ব নেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ কোচের। পরের বছরই টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জেতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। পরে আফগানিস্তান ক্রিকেট দলের কোচেরও দায়িত্ব পালন করেছেন সিমন্স। প্রথমে ব্যাটিং কোচ হওয়ার পর ২০১৭ সালে হন প্রধান কোচ। আফগানিস্তান প্রথম টেস্ট জিতেছে তাঁর অধীনে। দুই বছর সেখানে থাকার পর ২০১৯ সালে আবারও ওয়েস্ট ইন্ডিজ কোচের দায়িত্ব নেন সিমন্স। ছেড়ে দেন ২০২২ টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর। বাংলাদেশের দায়িত্ব নেওয়ার আগে কোচ সিমন্সের সর্বশেষ জাতীয় দল ছিল পাপুয়া নিউগিনি। জাতীয় দলের বাইরে বিভিন্ন ফ্র্যাঞ্চাইজি দলের কোচের দায়িত্বও পালন করেছেন তিনি।
আগামী সপ্তাহে শুরু হতে যাওয়া দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজের আগে বাংলাদেশ দলের প্রধান কোচের দায়িত্ব নেবেন সিমন্স। তাঁর ভাতিজা লেন্ডল সিমন্সও ওয়েস্ট ইন্ডিজ জাতীয় দলে খেলেছেন।
১৯৮৮ সালে ভিভ রিচার্ডসের ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলে আন্তর্জাতিক অভিষেকের পর ১৯৯৯ সালে শেষ (ওয়ানডে) আন্তর্জাতিক ম্যাচটি খেলেন সিমন্স। সেটি ছিল ব্রায়ান লারার ওয়েস্ট ইন্ডিজ। অর্থাৎ এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্ম আসার পর বিদায় নিয়েছেন সিমন্স। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেকের বছরই ওই দুর্ঘটনাটা না ঘটলে তাঁর ক্যারিয়ার আরও উজ্জ্বল হতো কি না, তা অবশ্য একটা প্রশ্ন। ব্রিস্টলে গ্লস্টারশায়ারের বিপক্ষে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ট্যুর ম্যাচে ডেভিড লরেন্সের বাউন্সার লেগেছিল সিমন্সের মাথায়। মাথায় হেলমেট ছিল না। মাটিতে লুটিয়ে পড়েছিলেন। থেমে গিয়েছিল হৃৎস্পন্দনও। অস্ত্রোপচারের পর জীবন ফিরে পেয়েছিলেন সিমন্স।