দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে পরিবর্তনের নতুন ঢেউ তুলতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের প্রস্তুতি চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে গেছে। শীর্ষ নেতৃত্বসহ দলীয় কাঠামো প্রায় নির্ধারিত হলেও দলের নাম এখনও চূড়ান্ত হয়নি। ২৪ ফেব্রুয়ারিকে সামনে রেখে দল গঠনের কার্যক্রম চললেও প্রয়োজন হলে তা ২৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পিছিয়ে যেতে পারে।
নেতৃত্বে কারা থাকছেন?
নতুন দলের শীর্ষ নেতৃত্বে রয়েছেন জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের অগ্রণী নেতারা। অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলামের আহ্বায়ক পদে থাকা প্রায় নিশ্চিত, আর সদস্য সচিব পদে আসতে পারেন জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন। এদের নেতৃত্বে নতুন দল আত্মপ্রকাশের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
যুগ্ম-আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পেতে পারেন জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসিরুদ্দীন পাটওয়ারী, মুখপাত্র সামান্তা শারমিন, যুগ্ম-আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদিব এবং যুগ্ম সদস্য সচিব অনিক রায়। এ ছাড়া যুগ্ম সদস্য সচিব হিসেবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য সচিব আরিফ সোহেল, জাতীয় নাগরিক কমিটির যুগ্ম-আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমার নাম আলোচনায় রয়েছে।
দলের মুখপাত্রের দায়িত্ব পেতে পারেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ। অন্যদিকে, জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম হতে পারেন দলের মুখ্য সংগঠক। এই দল গঠনের মাধ্যমে দীর্ঘদিনের আন্দোলনের অগ্রগামী নেতারা একত্রিত হয়ে নতুন রাজনৈতিক বিকল্প তৈরি করতে চান।
দলের নাম কী হবে?
নতুন দলের নাম নির্ধারণের জন্য ‘আপনার চোখে নতুন বাংলাদেশ’ নামে একটি জনমত জরিপ কর্মসূচি চালানো হয়েছে। এই জরিপে ‘গণতন্ত্র’, ‘নাগরিক’, ‘জাস্টিস’ ও ‘বৈষম্যবিরোধী’ শব্দগুলো উঠে এসেছে। নেতারা জনগণের মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে দলের নাম চূড়ান্ত করতে চান।
আত্মপ্রকাশের পরিকল্পনা
নতুন রাজনৈতিক দলের আনুষ্ঠানিক আত্মপ্রকাশের তারিখ এখনও নিশ্চিত না হলেও, ২৪ ফেব্রুয়ারি কিংবা ২৬ ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে এক বিশাল সমাবেশ আয়োজনের প্রস্তুতি চলছে। বিকল্প হিসাবে রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউকেও বিবেচনায় রাখা হয়েছে।
প্রস্তুতি ও সাংগঠনিক কার্যক্রম
নতুন দলের আত্মপ্রকাশ সফল করতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি ৬৮ জন এবং ৩০ জন নেতা নিয়ে প্রস্তুতি কমিটি গঠন করেছে। সাংস্কৃতিক, চিকিৎসা ও গণমাধ্যমসংক্রান্ত পৃথক তিনটি উপকমিটিও গঠন করা হয়েছে। এ ছাড়া ‘আপনার চোখে নতুন বাংলাদেশ’ কর্মসূচির মাধ্যমে সংগৃহীত জনমত পর্যালোচনার জন্যও একটি উপকমিটি গঠন করা হয়েছে।
নতুন দলের আত্মপ্রকাশের দিনে সারাদেশ থেকে বিপুলসংখ্যক কর্মী-সমর্থক ঢাকায় সমবেত হবেন বলে আশা করা হচ্ছে। দলীয় নেতারা নিশ্চিত করতে চান যে এই সমাবেশ হবে সুসংগঠিত ও শৃঙ্খলাপূর্ণ।
এই নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের মধ্য দিয়ে দেশে একটি নতুন ধারা শুরু হতে পারে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন। এখন শুধু অপেক্ষা আনুষ্ঠানিক ঘোষণার।