নানা কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য ও বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে মন্ত্রিত্ব হারানো ডা. মুরাদ হাসান এবার জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য পদ থেকেও বাদ পড়েছেন।
বুধবার বিকালে উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের জরুরি সভায় সর্বসম্মতিক্রমে এই সিদ্ধান্ত হয়।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সানোয়ার হোসেন বাদশা ও সাধারণ সম্পাদক উপাধ্যক্ষ ড. মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সরিষাবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মুরাদ হাসানের সাম্প্রতিক বিভিন্ন বিতর্কিত মন্তব্যের কারণে দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গ হয়েছে। তাই দলের গঠনতন্ত্রের ৪৭ (৯) ধারা মোতাবেক তাকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য পদ থেকে সাময়িক অব্যাহতি দেওয়া হয়। তার ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির কাছে অব্যাহতিপত্র পাঠানো হবে।
এর আগে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মুরাদ হাসানকে জেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদকের পদ থেকে অব্যাহতি দেয় জেলা আওয়ামী লীগ।
সম্প্রতি একজন চিত্রনায়িকার সঙ্গে প্রতিমন্ত্রী মুরাদের কুরুচিপূর্ণ ও অশ্লীল ফোনালাপের বিষয়টি ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এনিয়ে শুরু হয় সমালোচনা। একজন প্রতিমন্ত্রীর মুখে এ ধরনের ভাষায় বিব্রত হন সংশ্লিষ্টরা। পরে বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নজরে এলে সোমবার তিনি সড়ক যোগাযোগ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের মাধ্যমে মুরাদকে পদত্যাগের জন্য নির্দেশ দেন।
মন্ত্রিসভায় ঠাঁই পাওয়ার পর থেকেই বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনায় ছিলেন ডা. মুরাদ হাসান। প্রথমে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী করা হয় তাকে। মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন সূত্রে জানা যায়, তার কিছু পদক্ষেপ এবং কথাবার্তায় মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীও বিব্রত হন। পরে প্রধানমন্ত্রী তাকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে সরিয়ে ২০১৯ সালের মে মাসে তথ্য মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব দেন।
এখানে এসেও বক্তব্য-বিবৃতি দিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দেন ডা. মুরাদ। সর্বশেষ রাষ্ট্রধর্ম, দেশের রাজনীতি, বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার নাতনিসহ নানা বিষয়ে মন্তব্য করে সমালোচনার জন্ম দেন ডা. মুরাদ হাসান। দলীয় বিভিন্ন সভায় অংশ নিয়ে উত্তেজিত বক্তব্য দিয়েও বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলেন দলের শীর্ষ নেতাদের। বিব্রত হয় তার নির্বাচনী আসন জামালপুর-৪ আসনের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও।
এর বাইরেও মঞ্চে উঠে গান গেয়ে দর্শক মাতানো, টিভি অনুষ্ঠানের উপস্থাপিকাকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করার মতো ঘটনাও ঘটান ডা. মুরাদ। প্রতিমন্ত্রীর মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে মঞ্চে গান গাওয়া, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে হালকাচালের মন্তব্য ও হাস্যরস করার ঘটনায় বিব্রত হচ্ছিলেন দল ও মন্ত্রণালয়ের কর্তা ব্যক্তিরাও। এসব নিয়ে প্রকাশ্যে কেউ কিছু বলতে না পারলেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন মহলে সমালোচনা থেমে ছিল না।
গত তিন দিন ধরে মুরাদ হাসান টক অব দ্য কান্ট্রি। তাকে নিয়ে সবখানে চলছে তুমুল আলোচনা-সমালোচনা। দলের প্রাথমিক সদস্য পদ থেকেও তাকে অব্যাহতি দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। এখনো তিনি সংসদ সদস্য পদে বহাল থাকলেও শেষ পর্যন্ত তিনি তা হারাচ্ছেন বলে জানা গেছে।