ইউক্রেন-রাশিয়ার চলমান যুদ্ধের মধ্যেও বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের প্রবৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। আগস্ট মাসের প্রথম ২২ দিনে পোশাক রপ্তানিতে বার্ষিক ৫৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে, এসময় রপ্তানি হয়েছে ২.৫ বিলিয়ন ডলারের।
বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএমইএ) সূত্র জানায়, তৈরি পোশাক খাত এই সময়ের মধ্যে একদিনে বছরওয়ারি হিসাবে (আগের বছরের তুলনায়) ৪৪৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে।
বিজিএমইএ’র সহ-সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, আশা করছি, ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি দিয়েই শেষ হবে চলতি আগস্ট। তবে সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে ঋণাত্মক প্রবণতা দেখা যেতে পারে।
এর আগে অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ৩৯৮ কোটি ৪৮ লাখ টাকার পণ্য রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ, যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৪ দশমিক ৭২ শতাংশ বেশি। এরমধ্যে কেবল পোশাক খাত থেকে এসেছে ২৮৮ কোটি ডলার; এ খাতের ১৬ দশমিক ৬১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
গত অর্থবছরের রেকর্ড ৫২ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানির ওপর ভর করে নতুন অর্থবছরে ৫৮ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে সরকার। এর মধ্যে জুলাই মাসে ৩৯২ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হবে বলে আশা করা হচ্ছিল।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যমতে, ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রথমবারের মতো একক দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানির পরিমাণ ১০ বিলিয়ন ডলার ছাড়ায়। এরমধ্যে ৯ বিলিয়ন ডলারই এসেছে তৈরি পোশাক খাত থেকে।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট স্থবিরতা থেকে বিশ্ব অর্থনীতি শিগগিরই পুনরুদ্ধার না হলে পোশাক রপ্তানি থেকে গত অর্থবছর যে রেকর্ড ৪২.২ বিলিয়ন ডলার অর্জন হয়েছিল, এ বছর ওই লক্ষ্যমাত্রায়ও পৌঁছানো সম্ভব হবে না বলে আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে সরকার তৈরি পোশাক রপ্তানির মাধ্যমে ৪৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে।
পোশাক খাতের নির্বাহীরা জানান, সামনেই যুক্তরাষ্ট্রে শিক্ষার্থীদের স্কুল-কলেজে ফেরার মওসুম। দেশটির দক্ষিণ অংশে এরমধ্যেই গ্রীষ্মের ছুটি শেষে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে ফিরতে শুরু করেছে। তার আগে গ্রীষ্মকালীন প্রায় সব কালেকশন বিক্রি শেষ করেছে ওয়ালমার্ট।
ইপিবির পরিসংখ্যান অনুসারে, ২০২১-২২ অর্থবছরে পোশাক সামগ্রীর মধ্যে বাংলাদেশ ২৮৫ কোটি ডলারের বোনা কাপড় এবং ৪৭৮ কোটি ডলারের নিটওয়্যার পোশাক রপ্তানি করেছে। অপ্রচলিত বাজারে হওয়া রপ্তানি থেকে স্থানীয় পোশাক খাত ৪ শতাংশ নগদ প্রণোদনা ভোগ করে। তাছাড়া, মোট রপ্তানির ১৪.৯৬ শতাংশের গন্তব্য ছিল অপ্রচলিত বাজার হিসাবে চিহ্নিত ১৫টিরও বেশি দেশে। ২০২০-২১ অর্থবছরে সেই দেশগুলোতে ৫০৮ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করা হয়েছে। অপ্রচলিত বাজারগুলোর মধ্যে জাপান, অস্ট্রেলিয়া, রাশিয়া, ভারত, চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, ব্রাজিল, মেক্সিকো উল্লেখযোগ্য।
ইপিবির তথ্য অনুসারে, অপ্রচলিত বাজারগুলোর মধ্যে গত অর্থবছরে জাপানে সবচেয়ে বেশি পোশাক রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। ২০২১-২২ অর্থবছরে এশিয়ার দেশটিতে ১০৯ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করা হয়েছে, যা ২০২০-২১ অর্থবছরের চেয়ে ১৬.২৮ শতাংশ বেশি।