ইভ্যালির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী মোহাম্মদ রাসেলকে জামিন দেয়া জরুরি বলে বলছেন প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান পরিচালনা পর্ষদের সদস্য শামীমা নাসরিন।ইভ্যালির সাবেক এই চেয়ারম্যান বলছেন, গ্রাহকদের পুরোনো অর্ডার এবং পেমেন্ট গেটওয়েতে আটকে থাকা পাওনা ফেরত দিতে সার্ভার চালুর বিকল্প নেই। আর এই সার্ভার চালু এবং ইভ্যালির ব্যবসায়িক গতিশীলতার প্রয়োজনে মোহাম্মদ রাসেলের জামিন গুরুত্বপূর্ণ।
বৃহস্পতিবার বিকালে এক অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
নতুন করে ইভ্যালির দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রথমবারের মতো এই সংবাদ সম্মেলনে গ্রাহকদের অর্ডার, পাওনা পরিশোধ, নতুন করে ব্যবসায়িক মডেলসহ প্রতিষ্ঠানটি কীভাবে চলবে এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী ইত্যাদি বিষয় তুলে ধরেন শামীমা।তিনি বলেন, তাদের কোনো প্রতারণা ছিল না।তিনি বলেন, ‘আপনারা বাড়ি করার জন্য অগ্রিম অর্থ দেন। এখন ডেভেলপার আপনাকে সঠিক সময়ে বাড়ি বুঝিয়ে দিতে না পারলে সেটা অন্যায়। তবে এই বিজনেসকে অন্যায় বলা সঠিক নয়। আমাদেরটা বাড়ি না, বিজনেস ডেভেলপমেন্ট ছিল এবং প্রাথমিক দায় ভবিষ্যৎ মুনাফা দিয়ে পরিশোধ করার পরিকল্পনা ছিল। আমরা মনে করি, এই পরিকল্পনায় আমাদের ত্রুটি ছিল। নতুন এই যাত্রায় আমরা প্রথম দিন থেকে মুনাফা করে পণ্য বিক্রি করবো। যেহেতু আমাদের সঙ্গে সরকার এবং ই-ক্যাব প্রতিনিধি আছেন, সেহেতু আগের ভুলের পুনরাবৃত্তির সুযোগ নেই।
ইভ্যালির এই সহ-প্রতিষ্ঠাতা বলেন, ‘এক বছর নিরবচ্ছিন্ন ব্যবসার সুযোগ পেলে ইভ্যালি তাদের দেনা পরিশোধ করতে পারবে । আমাদের দেনা পরিশোধ করতে এখন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন বিনিয়োগ। একটি যথাযথ বিনিয়োগের বিকল্প নেই। মূলত আমাদের লক্ষ্য ছিল ইভ্যালিকে একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার পর আমরা দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ নেবো। আমরা চেয়েছিলাম বিদেশি বিনিয়োগ কম ভ্যালুয়েশনে না আসুক।’‘বাংলাদেশের ই-কমার্স মার্কেট সাইজ অনুযায়ী ইভ্যালি মাল্টি বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ তোলার সক্ষমতা রাখে। বর্তমানে ইভ্যালিতে বিনিয়োগ পেতে সবচেয়ে জরুরি হচ্ছে একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত বিজনেস করে বিনিয়োগকারীদের এটাকে লাভজনক ও সম্ভাবনাময় খাত হিসেবে উপস্থাপন করা। আমরা এই যাত্রায় প্রথম দিন থেকে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান হিসেবে ইভ্যালিকে একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করতে যাচ্ছি। আমরা মনে করি আগামী এক বছর নিরবচ্ছিন্ন ব্যবসা করতে পারলে প্রথম বিনিয়োগ থেকেই সব দেনা পরিশোধ করা সম্ভব হবে’ বলছিলেন তিনি।
শামীমা নাসরিন বলেন, আপনারা জেনেছেন সার্ভার আইডি কোড একটি জটিল নম্বর। এটি আসলে মুখস্থ থাকার বিষয় না। এটি হারিয়ে যাওয়ার ফলে রিকভারি করা জটিল হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেক্ষেত্রে আমাজনের সঙ্গে কোম্পানির সিইও মোহাম্মদ রাসেল সরাসরি কথা বলতে পারতেন। কিন্তু বর্তমানে তিনি কারাগারে থাকায় পুরো প্রক্রিয়াটি জটিলতায় পড়েছে। তাই রাসেলের জামিন হওয়া দরকার।
তিনি বলেন, আমাদের অনুধাবন হচ্ছে, কোনো কোনো ব্যক্তি বিশেষ এবং মহল গণমাধ্যমকে অনেক সময়েই ভুল তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করছে। আমাদের ব্যবসায়িক প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আমাদের ক্ষতি করার উদ্দেশ্যেই তারা এমনটা করছে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, এতে শুধু ইভ্যালির ক্ষতি হয় না বরং ৪৩ লাখ গ্রাহক, ৩০ হাজার ব্যবসায়ী এবং সামগ্রিকভাবে দেশের অর্থনীতি ও ইমেজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
শামীমা আরও বলেন, ৪৭ হাজার কোটি টাকার হিসাব নাই, আমরা মানি লন্ডারিং করেছি, ঘনঘন দুবাই যাচ্ছি—এগুলো ভিত্তিহীন সংবাদ। এগুলো একটু যাচাই করলেই বোঝা যায় মনগড়া কথা। কেউ ইমিগ্রেশন অফিস চেক করলেই তো দেখা যেত আমরা দুবাই যাই কিনা।
তিনি বলেন, আমাদের স্বপ্ন ছিল চীনের জ্যাক মার মতো। যদি সে ই-বেকে পেছনে ফেলে ব্যবসায়িক কৌশল দিয়ে পৃথিবীর বুকে আলিবাবাকে একটি গৌরবোজ্জ্বল প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে পারে, তাহলে আমরা কেন পারবো না? এই লক্ষ্যে মোহামম্দ রাসেল ই-কমার্স বিজনেস শুরু করেন। আমাদের মূল লক্ষ্যই ছিল পণ্য বিক্রয়ে পরিচালন ব্যয় কমিয়ে গ্রাহকদের আকর্ষণীয় মূল্যে সর্বোত্তম সেবা প্রদান করা।