‘দেশে মানুষের জীবন ও ব্যক্তিগত সম্পদের নিরাপত্তা নেই, দেশের শাসনকার্যে দৃশ্যমান ব্যর্থতা পরিলক্ষিত হচ্ছে’- এমন মন্তব্য মন্তব্য করেছেন সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান জিএম কাদের।
মঙ্গলবার ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স মিলনায়তনে জাতীয় যুব সংহতির পরিচিতি সভা ও ইফতার অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
জিএম কাদের বলেন, দেশে মানুষের জীবন ও ব্যক্তিগত সম্পদের নিরাপত্তা নেই। দেশের শাসনকার্যে দৃশ্যমান ব্যর্থতা পরিলক্ষিত হচ্ছে। শাসনকার্য ভালোভাবে চলছে না, অর্থাৎ সুশাসনের অভাব। সুশাসন হচ্ছে আইনের শাসন ও ন্যায়বিচারভিত্তিক সমাজব্যবস্থা। আইনের শাসনের মধ্যে দুটি প্রধান বিষয় গুরুত্বপূর্ণ। এরমধ্যে আইনের চোখে সবাই সমান ও শিষ্টের পালন এবং দুষ্টের দমন। ন্যায়বিচারভিত্তিক সমাজ বলতে বৈষম্য, নিপীড়ন ও নির্যাতনহীন সমাজকে বুঝি।
তিনি বলেন, আইন সবার জন্য সমান কতটুকু এদেশে? সরকারী দলের মানুষ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্নভাবে বিচার বা শাস্তি এড়িয়ে যাচ্ছেন। এ ঘটনা নিত্যনৈমিত্তিক। এ পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য কোনো মামলা কি হয়েছে সরকারের বিরুদ্ধে? সরকার পরাজিত হতে চাননি কিন্তু মামলায় সরকার পরাজিত হয়েছেন এমন ঘটনা কি ঘটেছে? আমার জানা নেই। যাকেই জিজ্ঞাসা করেছি কেউ বলতে পারেনি। অনেকেই বলেছে হয়নি।
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, দেড় লাখ ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মধ্যে এক লাখ ১০ হাজার ইতোমধ্যেই অকেজো হয়ে পড়েছে। এতে রাষ্ট্রের ক্ষতি হয়েছে আড়াই হাজার কোটি টাকা। ১০ বছর মেয়াদি ক্রয়কৃত ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) পাঁচ বছরেই শেষ। বাকি ৪০ হাজার ভোটিং মেশিনও অকেজো হওয়ার পথে। বেশির ভাগ ইভিএমই এখন অকেজো। শেষ পর্যন্ত চার হাজার কোটি টাকার প্রকল্পের আওতায় কেনা ইভিএম সম্পদের বিলুপ্তি ঘটতে যাচ্ছে।
জিএম কাদের এ সময় আরও বলেন, কক্সবাজারের মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য আমদানি করা জার্মানির তৈরি দুটি পাইপ কাটারের দাম দেখানো হয়েছে ৯২ লাখ ৯৯ হাজার টাকা। একইভাবে জার্মান কোম্পানির দুটি হাতুড়ির দাম দেখানো হয়েছে এক লাখ ৮২ হাজার টাকা। এসব পণ্যের এমন অস্বাভাবিক দাম দেখে চালানটি আটকে দেয় কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। তারপর এসব পণ্য আমদানিকারক সিপিজিসিবিএল ও পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের কাছে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়।
তিনি বলেন, কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে- শুধু এই দুটি পণ্য নয়, এই চালানের ১৯টি পণ্যই অযৌক্তিক উচ্চমূল্যে আমদানি করা হয়েছে। মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য আনা এ চালানটির আমদানি মূল্য দেখানো হয়েছে ২ দশমিক ৭৫ কোটি টাকা বা দুুই লাখ ৫০ হাজার ৮৬৩ মার্কিন ডলার।
জিএম কাদের বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের দ্বিতীয় নিবাস গড়ায় নতুন করে উৎসাহ জোগাচ্ছে মালয়েশিয়া। মাঝে কড়াকড়ি করলেও এখন বিনিয়োগ টানতে ‘মালয়েশিয়ায় মাই সেকেন্ড হোম (এমএম২এইচ)’ কর্মসূচির শর্ত শিথিল করছে দেশটির সরকার। ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত মালয়েশিয়ায় দ্বিতীয় নিবাস গড়েছেন ৫৬ হাজার ৬৬ জন। এর মধ্যে তিন হাজার ৬০৪ জন বাংলাদেশি।
তিনি বলেন, বিদেশে দ্বিতীয় নিবাস গড়ার জন্য কাউকে বিনিয়োগের অনুমতি দেওয়া হয়নি। তাহলে বাংলাদেশিরা কিভাবে মালয়েশিয়া দ্বিতীয় নিবাস গড়ল। কিভাবে টাকা নিয়ে গেল?
জাতীয় যুব সংহতির সভাপতি ও ভাইস-চেয়ারম্যান এইচএম শাহারিয়ার আসিফের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক আহাদ ইউ চৌধুরী শাহিনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট মো. রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মনিরুল ইসলাম মিলন, ড. নূরুল আজাহার শামীম, নুরুল ইসলাম তালুকদার, মো. খলিলুর রহমান খলিল, ভাইস-চেয়ারম্যান সফিউল্লাহ শফি, যুগ্ম মহাসচিব গোলাম মোহাম্মদ রাজু, মো. বেলাল হোসেন, অ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ ভাসানী, সম্পাদক মন্ডলির সদস্য এমএ রাজ্জাক খান, মো. মিজানুর রহমান মিরু প্রমুখ।