কুমিল্লার দেবিদ্বারে প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগ দাবি করে চেয়ারে বসা সেই শিক্ষার্থী ক্ষমা চাইলেন প্রধান শিক্ষকের কাছে। প্রধান শিক্ষক তাকে করে দিয়েছেন।
রোববার (২৯ সেপ্টেম্বর) বিকালে ইউএনও ও স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে প্রধান শিক্ষক কাজী আলমগীর হোসেনের কাছে ক্ষমা চাইলে তিনি ক্ষমা করে দেন। চেয়ারে বসা শিক্ষার্থীর নাম ইকরামুল হাসান। সে দশম শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী।
এর আগে গত ২৬ সেপ্টেম্বর সকাল থেকে উপজেলার মোহনপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জন করে প্রধান শিক্ষক মো. আলমগীর হোসনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ এনে তার পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করেন। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ ছিল প্রধান শিক্ষক আওয়ামী লীগ করেন ও বিদ্যালয়ের অর্থে তিনি বিপুল পরিমাণ সম্পত্তির মালিক হয়েছেন। তাই তাকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করতে হবে। খবর পেয়ে প্রথমে দেবিদ্বার সহকারী কমিশনার (ভূমি) এবং পরে দুপুরের পর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও বিদ্যালয়টির সভাপতি নিগার সুলতানা সেনাবাহিনী নিয়ে ঘটনাস্থলে যান। কিন্তু শিক্ষার্থী প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগের সিদ্ধান্তে অনঢ় থাকে। পরে বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে সেনাবাহিনীর সহায়তায় প্রধান শিক্ষক পদত্যাগ না করেই বিদ্যালয় ত্যাগ করেন। প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয় ত্যাগ করার পর তারই চেয়ারে বসে যান একই বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী ইকরামুল হাসান এবং ছবি তুলে এ ছবি প্রথমে নিজের ফেসবুকেই আপলোড করেন ওই ছাত্র। লিখেন ‘ আমাদের সু-সন্মানিত আলমগীর স্যার কোথায়। বৃহস্পতিবার রাত থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে পড়ে সেই ছবি। আন্দোলনের নামে শিক্ষার্থীদের এমন দৃষ্টতা নিয়ে নেটিজেনরা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। এ নিয়ে বিদ্যালয়ের এলাকার লোকজন, সাধারণ শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরাও ক্ষুব্ধ।
রোববার বিকালে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ের ওই সভায় উপস্থিত ছিলেন বিদ্যালয় পরিচালানা কমিটির সভাপতি ও দেবিদ্বার উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) নিগার সুলতানা, মোহনপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ময়নাল হোসেন, সাবেক চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম মাস্টার, মো. তাজুল ইসলাম ও সাবেক সমাজ সেবা কর্মকর্তা আব্দুল কাইয়ুম সরকার ও প্রধান শিক্ষক কাজী আলমগীর হোসেনসহ এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিবগ।
নিজের ভুল বুঝতে পেরে শিক্ষার্থী ইকরামুল হাসান বলেন, আমি আবেগে স্যারের চেয়ারে বসেছি, স্যারের চেয়ারে বসা আমার ঠিক হয়নি, আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি, স্যারের নিকট ক্ষমা চেয়েছি। স্যার আমাকে ক্ষমা করে দিয়েছেন। ভবিষ্যতে এমন ভুল আর কখনই করব না।
প্রধান শিক্ষক কাজী আলমগীর হোসেন বলেন, শিক্ষার্থীরা আমাদের সন্তান, ইকরামুল এসএসসি পরীক্ষার্থী। ছোট মানুষ ভুল করেছে, সে এমন ভুল আর কখনই করবে না বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, তাই আমি তাকে ক্ষমা করে দিয়েছি।
বিদ্যালয় পরিচালানা কমিটির সভাপতি ও দেবিদ্বার উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) নিগার সুলতানা বলেন, প্রধান শিক্ষকের চেয়ারে বসা শিক্ষার্থীর একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এছাড়া কয়েকটি গণমাধ্যমেও এ নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়। রোববার বিকালে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে ওই শিক্ষার্থী ক্ষমা চাইলে প্রধান শিক্ষক তাকে ক্ষমা করে দেন। ওই শিক্ষার্থী এমন কাজ আর কখনই করবে না মর্মে অঙ্গীকার করেছে।