স্বাধীনতার পাঁচ দশকের বাংলাদেশে সামষ্টিক অর্থনীতির অগ্রযাত্রা নিঃসন্দেহে অভাবনীয়। বিরাজমান অর্থনৈতিক বৈষম্য সত্ত্বেও আমাদের অগ্রযাত্রার সুফল সমাজের সব মানুষের কাছে মোটামুটিভাবে পৌঁছে দেয়া গেছে। ভোগ পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকায় মানুষ এখন শুধু খেয়ে-পরেই বেঁচে নেই, নিজেদের ভাগ্যোন্নয়নেও যথেষ্ট সচেষ্ট রয়েছে।
বাংলাদেশের পরিশ্রমী ও উদ্যমী মানুষের ধ্বংসস্তূপ থেকে উঠে দাঁড়ানোর উপাখ্যান সত্যিই অসামান্য। এ ৫০ বছরে ধান উৎপাদন বেড়েছে চার গুণেরও বেশি। গম দ্বিগুণ। ভুট্টা ১০ গুণ। সবজি পাঁচ গুণ। মিঠাপানির মাছ উৎপাদনে আমরা দ্বিতীয়। মাংসে স্বয়ংসম্পূর্ণ। ১৮ বছর ধরে ফল উৎপাদন বাড়ছে সাড়ে ১১ শতাংশ হারে। স্বাধীনতার অব্যবহিত পর যে দেশের অর্থনীতির ভবিষ্যৎ নিয়ে বিশেষজ্ঞরা চিন্তিত ছিলেন, সেই দেশটি আগামী বছরে অর্ধট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতির দেশ হতে যাচ্ছে। করোনাজনিত অর্থনৈতিক অচলাবস্থার ধাক্কার মধ্যেও বাংলাদেশ অচিরেই দুই অংকের প্রবৃদ্ধির স্বপ্ন দেখছে। এরই মধ্যে অর্জন করেছে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা। দুর্যোগপূর্ণ অবস্থার মধ্যেও মাথাপিছু আয় দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৫৫৪ ডলারে।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বঙ্গবন্ধু মানুষের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা ও নিশ্চয়তাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে দ্রুত শুরু করেছিলেন অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের এক অভাবনীয় অগ্রযাত্রা। তাই ১৯৭২ সালের ৯৩ ডলারের মাথাপিছু আয়কে চার বছরেরও কম সময়ে ২৭৩ ডলারে আনা সম্ভব হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুকে শারীরিকভাবে হারিয়ে এ অগ্রযাত্রা স্থবির হয়ে না পড়লে আমরা হয়তো অনেক আগেই আজকের অবস্থায় পৌঁছতে পারতাম। তবে বহু ত্যাগ ও সংগ্রামের পর বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে দেশ আবার তার কাঙ্ক্ষিত রেখায় এসেছে।ads
বিশেষত গত এক যুগে তার নেতৃত্বে আমাদের সামষ্টিক অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রা এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছে গেছে। ২০০৭-০৮ সালের বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যে ক্ষমতা হাতে নিয়ে নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেই তিনি দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী এক অবস্থানে দাঁড় করিয়েছেন। আর তার সরকারকে সাহায্য করার চেষ্টা করেছে দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ অর্থে বাংলাদেশ ব্যাংক এক উন্নয়নমুখী কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈশিষ্ট্য অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তরকালে বিশ্বব্যাপী প্রথাগত কেন্দ্রীয় ব্যাংকিংয়ের ব্যাপক প্রসার আমরা লক্ষ করেছি। কিছু কিছু উন্নয়নশীল দেশে এর বিরুদ্ধ স্রোত লক্ষ করা গেলেও ওয়াশিংটন কনসেনশাসের পর থেকে গোটা বিশ্বে শুধু মূল্যস্ফীতিকে উদ্দেশ্য করে মুদ্রানীতি প্রণয়ন ও তা বাস্তবায়নের মধ্যেই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কার্যক্রম সীমাবদ্ধ রাখা হচ্ছিল। কিন্তু চলতি শতাব্দীর প্রথম দশকের শেষে এসে এ প্রথাগত কেন্দ্রীয় ব্যাংকিংয়ের ভয়াবহ কুফল ভোগ করতে হয় ছোট-বড় সব অর্থনীতিকেই, যার প্রতিফলন আমরা দেখতে পাই বৈশ্বিক আর্থিক সংকটের সময়।