বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন- সাড়ে ১৫ বছরে বিভিন্ন পর্যায়ে যাদেরকে হত্যা করা হয়েছে এবং জুলাই-আগস্ট ২০২৪ সালে যে গণহত্যা হয়েছে, সেই গণহত্যাকারী, হত্যার নির্দেশদাতা, পরিকল্পনাকারী, বাস্তবায়নকারী, সবগুলোকে বিচারের আওতায় আনতে হবে। তিনি মঙ্গলবার সকালে শহরের লোকনাথ ময়দানে জেলা জামায়াতে ইসলামীর এক কর্মিসভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এই দাবি জানান।
জামায়াত হিংসার রাজনীতি করে না জানিয়ে জামায়াত আমীর বলেন, ওবায়দুল কাদের একাধিকবার বলেছেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতা থেকে চলে যাওয়ার ২ দিনের মধ্যে তাদের ৫ লাখ নেতাকর্মীকে হত্যা করা হবে। আমি জিজ্ঞেস করতে চাই, ৫ই আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পর কি এদেশে ৫ লাখ মানুষ খুন হয়েছে? ৫ হাজার, ৫শ’, ৫০ জন, ৫ জন? কোনো কিছুই হয়নি। দু’-একটি মব জাস্টিজের নামে অঘটন ঘটেছে। এ সংখ্যা খুব সীমিত। আমরা এর নিন্দা জানিয়েছি। কেউ আইন হাতে তুলে নেবে এটা আমরা চাই না। যারা এ ধরনের অপকর্ম করছে তারা কারা? এরাও আওয়ামী লীগের প্রেতাত্মা-ছাত্রলীগ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মানসিক ভারসাম্যহীন একটা ছেলেকে ভাত খাওয়ানোর পর হাসতে হাসতে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। খোঁজ নিয়ে দেখা গেল ঘটনায় জড়িত ৬ জনের ৫ জনই ছাত্রলীগ। এরা খুনের নেশা থেকে এখনো বের হয়ে আসতে পারেনি। বাংলাদেশের জনগণকে সাবধান থাকতে হবে, এই বিপ্লবে যারা পরাজিত হয়েছে পতিত স্বৈরাচার তাদের অন্তরে জ্বালাও-পোড়াও সৃষ্টি হয়েছে। মাঝে মধ্যে তারা কিছু অঘটন ঘটাতে চাইছে। আপনারা দেখেছেন আনসার কাণ্ড ঘটিয়েছে। বয়স কাণ্ড ঘটিয়েছে। বিচারিক ক্যু করতে চেয়েছে। জনগণ আল্লাহর সাহায্য ওপর ভর করে সবকিছু ব্যর্থ করে দিয়েছে। এখন তারা ইসলামিক চাদর গায়ে দিয়ে নতুন রূপে আবির্ভূত হচ্ছে। ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় তারা হাতেনাতে ধরা পড়ছে। ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতারা বিশেষ একটি ধর্মীয় সংগঠনের নামে আমাদের কোমলমতি সন্তানদের উসকে দিয়ে রাস্তায় অশান্তি সৃষ্টি করতে চাইছে। বিশেষ ধরনের পতাকা এরা হাতে বহন করে। বাংলাদেশকে দুনিয়ার সামনে একটি জঙ্গি, উচ্ছৃঙ্খল, চরমপন্থি দেশ হিসেবে দেখানোর ষড়যন্ত্র করছে। ইনশাআল্লাহ এই জাতি সম্মিলিতভাবে এই ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করে দেবে। জেলা জামায়াতে ইসলামীর আমীর মোহাম্মদ গোলাম ফারুকের সভাপতিত্বে এতে প্রধান বক্তা ছিলেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এ.টি. এম মাসুম। জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি মুহাম্মদ মুবারক হোসেনের সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও কুমিল্লা নোয়াখালী অঞ্চলের টিম সদস্য মোহাম্মদ আব্দুস সাত্তার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা জামায়াতের সাবেক আমীর কাজী নজরুল ইসলাম খাদেম প্রমুখ।
সাবেক সেক্রেটারি সৈয়দ গোলাম সারোয়ার, সাবেক নায়েবে আমীর কাজী মো. ইয়াকুব আলী, জেলা ইসলামী ছাত্রশিবিরের সভাপতি মো. আতিকুল ইসলাম প্রমুখ। ক্ষমতায় জামায়াত বা অন্য কেউ গেলেও তাদের পরীক্ষা করে দেখার কথা জানিয়ে জামায়াত আমীর বলেন- রাজপথে থাকা অবস্থায়, বিরোধী দলে থাকা অবস্থায় এটা ভালো না, ওইটা ভালো না, এটা কালো-কুৎসিত, এই সমস্ত আইন পরিবর্তন করতে হবে, এই দাবি আমরা তুলেছি। ক্ষমতায় যাওয়ার পর নিজেদের হাতে কালো আইন তুলে দেয়া হয় কিনা। যারা তুলে দেবেন তারা সত্যবাদী, তারা ওয়াদার বরখেলাপকারী হিসেবে চিহ্নিত হবেন। অতীতের রাস্তা ধরে জাতিকে ধোঁকা দেবেন, মনে রাখবেন কারও ক্ষমতা চিরস্থায়ী হয় না। আওয়ামী লীগের পতনের মধ্যদিয়ে যা প্রমাণিত হয়েছে। সুতরাং এই দুঃস্বপ্ন যাতে আমরা কেউ না দেখি। আর কোনো অত্যাচারী শাসক যেন জাতিকে দেখতে না হয়।