থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে স্রেথা থাভিসিনকে গত বুধবার সাংবিধানিক আদালত পদচ্যুত করেছেন। এর দুদিন পর গতকাল শুক্রবার পেতংতার্ন সিনাওয়াত্রাকে নতুন ও সর্বকনিষ্ঠ প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত করেছে দেশটির পার্লামেন্ট।
নতুন ও সর্বকনিষ্ঠ প্রধানমন্ত্রী পেতংতার্ন এবং থাইল্যান্ডে ঠিক কী ঘটেছিল, সে সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক:
ফিউ থাই পার্টির নেতা স্রেথা থাভিসিনকে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে অপসারণে পার্লামেন্টের ৪০ জন সিনেটর একটি পিটিশন দাখিল করেছিলেন। চলতি বছর সাংবিধানিক আদালতের বিচারকেরা ৬–৩ ভোটে পিটিশনটি গ্রহণ করেন।
স্রেথার বিরুদ্ধে অভিযোগ, দুর্নীতি ও আদালত অবমাননার দায়ে ২০০৮ সালে ছয় মাসের কারাদণ্ড পাওয়া সাবেক আইনজীবী পিচিট চুয়েনবানকে মন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিলেন তিনি। পিচিটের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তিনি আদালতের কর্মীদের একটি ব্যাগে ২০ লাখ বাথ (৫৫ হাজার ২১৮ ডলার) ঘুষ দেওয়ার চেষ্টা করেন।
ওই সিনেটরদের যুক্তি, দণ্ডপ্রাপ্ত পিচিটকে মন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার মধ্য দিয়ে ‘নৈতিকতার মান’ লঙ্ঘন করেছেন স্রেথা।
সমালোচকদের এ–ও অনুমান, ফিউ থাই পার্টির (২০০৭ সাল) প্রতিষ্ঠাতা ও ধনকুবের থাকসিন সিনাওয়াত্রার সঙ্গে পিচিটের যোগাযোগ তাঁকে (থাকসিন) প্রধানমন্ত্রী পদে অধিষ্ঠিত হতে সহায়তা করে।
স্রেথাকে বুধবার আনুষ্ঠানিকভাবে অপসারণ করেন ব্যাংককের সাংবিধানিক আদালত। গত ১৬ বছরের মধ্যে তিনি হলেন থাইল্যান্ডের চতুর্থ প্রধানমন্ত্রী, যাঁকে সাংবিধানিক আদালত ক্ষমতাচ্যুত করলেন।
কে এই নতুন প্রধানমন্ত্রী
পেতংতার্ন (৩৭) সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও ফিউ থাই পার্টির প্রতিষ্ঠাতা ধনকুবের থাকসিন সিনাওয়াত্রার (৭৫) ছোট মেয়ে। পদচ্যুত প্রধানমন্ত্রী স্রেথাও একই রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
গতকাল সহজেই প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন পেতংতার্ন। কেননা পার্লামেন্টের ৪৯৩ আসনের মধ্যে তাঁর দল ও জোটের আসন ৩১৪টি। প্রধানমন্ত্রী হতে বর্তমান আইনপ্রণেতাদের অন্তত অর্ধেক সংখ্যকের সমর্থন প্রয়োজন ছিল তাঁর। পার্লামেন্টে গতকাল অনুষ্ঠিত ভোটাভুটিতে পেতংতার্নের পক্ষে ৩১৯টি ভোট পড়ে, আর বিপক্ষে পড়ে ১৪৫টি।
পেতংতার্ন ব্যাংককের চুলালংকর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন।
উং–ইং ডাকনামেও পরিচিত পেতংতার্ন। তিন বছর আগে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন তিনি। এর আগে তিনি পারিবারিক হোটেল ব্যবসা পরিচালনায় সহায়তা করতেন।
পেতংতার্নের রাজনৈতিক জীবন শুরু হয় ২০২১ সালে। ওই সময় ফিউ থাই পার্টির ইনক্লুশন অ্যান্ড ইনোভেশন অ্যাডভাইজরি কমিটির প্রধান হন তিনি।
২০২৩ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের দুই সপ্তাহ আগে দ্বিতীয় সন্তানের মা হন পেতংতার্ন। নির্বাচনে তিনি ছিলেন একজন জনপ্রিয় প্রার্থী।
পেতংতার্ন থাকসিন পরিবার থেকে দেশের শীর্ষ পদে আরোহণ করা তৃতীয় ব্যক্তি। তাঁর বাবা থাকসিন থাই রক থাই পার্টি থেকে ২০০১ সালে প্রধানমন্ত্রী হন। ২০০৬ সালে সামরিক অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার আগপর্যন্ত এ পদেই ছিলেন তিনি।
থাকসিনের বোন ইংলাক সিনাওয়াত্রা ২০১১ সালে প্রধানমন্ত্রী হন। ২০১৪ সালে সাংবিধানিক আদালত তাঁকে এ পদ থেকে অপসারণ করেন। একই বছর আরেক সামরিক অভ্যুত্থানে কয়েক মাসের জন্য রাজনৈতিক অস্থিরতায় পড়ে থাইল্যান্ড।
ওই ঘটনার পর গ্রেপ্তার এড়াতে থাকসিন ও ইংলাক দুজনই দেশ ছেড়ে স্বেচ্ছা নির্বাসনে যান। গত বছরের আগস্টে দেশে ফেরেন থাকসিন।
এখন পেতংতার্ন থাইল্যান্ডের সবচেয়ে কনিষ্ঠ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিতে চলেছেন। তা ছাড়া তিনি হচ্ছেন দেশটির দ্বিতীয় নারী প্রধানমন্ত্রীও। এর আগে তাঁর ফুফু ইংলাক সিনাওয়াত্রা দেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বপালন করেন।
পেতংতার্নের নীতি কী
পেতংতার্ন গত বছর প্রধানমন্ত্রী পদের জন্য প্রচার চালান। ওই সময় তাঁর দেওয়া প্রতিশ্রুতিগুলোর মধ্যে ছিল ব্যাংককে গণপরিবহনের খরচ কমানো, স্বাস্থ্যসেবার আওতা বাড়ানো এবং দৈনিক ন্যূনতম মজুরি দ্বিগুণ করা।
প্রধানমন্ত্রী হিসেবে প্রথম দায়িত্বপালনকালে পেতংতার্নকে দেশের ঝিমিয়ে পড়া অর্থনীতি, তাঁর দলের প্রতি জনসমর্থন কমে যাওয়া, বিরোধীদের সম্ভাব্য উত্থানের মতো বিষয়গুলো মোকাবিলা করতে হবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।