ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে জামায়াতে ইসলামী এবং তাদের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র শিবিরকে নিষিদ্ধ ঘোষণার ২৮ দিনের মাথায় সেই আদেশ প্রত্যাহার করে নিল অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
বুধবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, জামায়াতে ইসলামী, এর ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবির বা এর কোনো অঙ্গ সংগঠনের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস ও সহিংসতায় সম্পৃক্ততার সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য প্রমাণ সরকার পায়নি।
“যেহেতু সরকার বিশ্বাস করে যে, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এবং উহার ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরসহ উহার সকল অঙ্গ সংগঠন সন্ত্রাসী কার্যকলাপের সাথে জড়িত নয়, সেহেতু সরকার, সন্ত্রাস বিরোধী আইন, ২০০৯ এর ধারা ১৮ এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এবং উহার ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরসহ উহার সকল অঙ্গ সংগঠনকে রাজনৈতিক দল ও সংগঠন হিসাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা সংক্রান্ত এ বিভাগের বিগত ১ আগস্ট তারিখের প্রজ্ঞাপন বাতিল করিল এবং উক্ত আইনের তফসিল-২ হইতে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এবং উহার ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরসহ উহার সকল অঙ্গ সংগঠন এর তালিকাভুক্তি বাতিল করিল।”
এই সিদ্ধান্ত অবিলম্বে কার্যকর হবে বলে জানানো হয়েছে প্রজ্ঞাপনে। আর সরকারের এই সিদ্ধান্তের ফলে রাষ্ট্রের চোখে জামায়াত-শিবির এখন আর ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ নয়।
আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ সময়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মধ্যে ‘সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড’ চালানোর অভিযোগে গত ১ অগাস্ট জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী ছাত্র শিবির এবং তাদের সহ অঙ্গ সংগঠনকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়।
সেই সঙ্গে ২০০৯ সালের সন্ত্রাসবিরোধী আইন অনুযায়ী জামায়াত এবং এর সকল অঙ্গ সংগঠনকে ‘সন্ত্রাসী সত্তা’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করে প্রজ্ঞাপন জারি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
সরকারের সেই নির্বাহী আদেশে বলা হয়,আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কয়েকটি মামলার রায়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী (পূর্বনাম জামায়াত-ই- ইসলামী/জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ) এবং এর অঙ্গ সংগঠন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরকে (পূর্বনাম ইসলামী ছাত্রসংঘ) ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকালে সংঘটিত গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধে দায়ী হিসাবে গণ্য করা হয়েছে।
পাশাপাশি হাই কোর্ট এক রিট মামলার রায়ে রাজনৈতিক দল হিসাবে নির্বাচন কমিশনে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল করে দিয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগও তা বহাল রেখেছে।
“যেহেতু, সরকারের নিকট যথেষ্ট তথ্য প্রমাণ রহিয়াছে যে, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এবং উহার অঙ্গ সংগঠন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির সাম্প্রতিককালে সংঘটিত হত্যাযজ্ঞ, ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে সরাসরি এবং উসকানির মাধ্যমে জড়িত ছিল;
“এবং যেহেতু, সরকার বিশ্বাস করে যে, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এবং বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরসহ উহার সকল অঙ্গ সংগঠন সন্ত্রাসী কার্যকলাপের সহিত জড়িত রহিয়াছে;
“সেহেতু, সরকার, সন্ত্রাস বিরোধী আইন, ২০০৯ এর ধারা ১৮(১) এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এবং বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরসহ উহার সকল অঙ্গ সংগঠনকে রাজনৈতিক দল ও সংগঠন হিসাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করিল এবং উক্ত আইনের তফসিল-২ এ বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরসহ উহার সকল অঙ্গ সংগঠনকে নিষিদ্ধ সত্তা হিসাবে তালিকাভুক্ত করিল।”
ইসলামী ছাত্র শিবিরের সাবেক নেতা, আইনজীবী শিশির মনির বুধবার দুপুরে সাংবাদিকদের বলেন, আওয়ামী লীগের সরকার পতনের পর নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় এলে ২২ অগাস্ট জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেলের স্বাক্ষরে একটি দরখাস্ত করা হয় সরকারের কাছে। জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করার ওই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আবেদন করা হয় সেখানে।
“এই দরখাস্তের ভিত্তিতে ডিজিএফআই, এনএসআই এবং এসবির রিপোর্ট তলব করা হলে রিপোর্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জমা করা হয়। ওজামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্র শিবিরের সঙ্গে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের যে অভিযোগ করা হয়েছিল, তার কোনো সম্পৃক্ততা তিনটি এজেন্সি পায়নি।
“এরপর আইন অনুযায়ী ১৯ নম্বর ধারার রিকোয়ারমেন্ট মোতাবেক রিভিউ প্যানেল গঠন করা হয়। তারাও ওই অভিযোগের সমর্থনে কোনো তথ্য প্রমাণ পাননি। এর প্রেক্ষিতে বিষয়টি স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার কাছে উপস্থাপন করা হয়। উনার স্বাক্ষরের পরে প্রধান উপদেষ্টা ও আইন উপদেষ্টার সকল প্রক্রিয়া শেষে সিদ্ধান্ত গৃহিত হয় যে, অতীতে যে প্রজ্ঞাপনটি জারি করা হয়েছিল, এই প্রজ্ঞাপনটি বাতিল ঘোষণা করা হল।”
আইনের প্রত্যেক ধারা-উপধারা অনুযায়ী এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে মন্তব্য করে শিশির মনির বলেন, “প্রক্রিয়াটা একটু লম্বা ছিল। কিন্তু আমরাও চেয়েছি আইন মানতে, যেন কারো কোনো আপত্তি না থাকে। আইনের ক্ষেত্রে কেউ যেন কখনো বলতে না পারে যে জামায়াতে ইসলামী আইনের বাইরে কাজ করেছে।”