হলিউডের এক সময়ের পাওয়ার কাপল অ্যাঞ্জেলিনা জোলি এবং ব্র্যাড পিটের বিচ্ছেদ প্রক্রিয়া অবশেষে সমঝোতায় পৌঁছেছে। প্রায় ৮ বছরের আইনি লড়াই শেষে তারা আনুষ্ঠানিকভাবে বিচ্ছেদের মিমাংসাপত্রে সই করেছেন, যা নিশ্চিত করেছেন জোলির আইনজীবী। তবে পিটের আইনজীবী এখন পর্যন্ত এই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেননি। হলিউডের ইতিহাসে অন্যতম দীর্ঘ বিচ্ছেদ প্রক্রিয়ার অবসান ঘটতে চলেছে, এখন কেবল সময়ের অপেক্ষা।
সম্পর্কের সূচনা ও বিচ্ছেদের কারণ
জোলি ও পিটের সম্পর্কের শুরুটা ২০০৫ সালের সিনেমা “মিস্টার অ্যান্ড মিসেস স্মিথ” এর সেট থেকে। সিনেমার শুটিংয়ের সময় তাদের মধ্যে গভীর বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে এবং ধীরে ধীরে তা প্রেমে পরিণত হয়। যদিও তারা মাত্র দুই বছর সংসার করেছেন, তাদের ছয় সন্তান (ম্যাডক্স, প্যাক্স, জাহারা, শিলো এবং যমজ ভিভিয়েন ও নক্স) ছিল, যাদের মধ্যে তিনজনকে দত্তক নেওয়া হয়েছিল।
তাদের সম্পর্কের ভাঙন শুরু হয় ২০১৬ সালে, যখন একটি ব্যক্তিগত বিমানে পিটের সাথে তর্কের পর জোলি বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেন। সন্তানদের অভিভাকত্ব এবং মালিকানাধীন ‘শ্যাঁতো মিরাভাল’ এস্টেটসহ নানা বিষয়ের কারণে বিচ্ছেদ প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত হয়। পিটের বিরুদ্ধে জোলি অভিযোগ করেন যে, তিনি প্রতিশোধমূলক যুদ্ধ চালাচ্ছেন, এবং পিটের অভিযোগ ছিল, জোলি তার ব্যবসায়িক স্বার্থ নষ্ট করছেন।
আইনি জটিলতা ও সন্তানের অভিভাকত্ব
বিচ্ছেদের পর সন্তানের অভিভাকত্বের বিষয়টি অন্যতম বড় আইনি জটিলতা হয়ে দাঁড়ায়। ২০১৮ সালে একবার তারা অভিভাকত্ব নিয়ে সমঝোতায় পৌঁছালেও পরবর্তীতে সেটি কার্যকর হয়নি। ২০২1 সালে আদালত সন্তানের যৌথ অভিভাকত্বের সিদ্ধান্ত দিলেও, পিটের বিরুদ্ধে আরও আইনি অভিযোগ ওঠে এবং শেষ পর্যন্ত জোলি এককভাবে অভিভাকত্ব লাভ করেন।
এছাড়া, ফ্রান্সের ‘শ্যাঁতো মিরাভাল’ এস্টেট নিয়ে নতুন আইনি জটিলতা তৈরি হয়। ২০০৮ সালে এই এস্টেটটি যৌথভাবে কেনা হলেও, পরে জোলি সেটির একটি অংশ বিক্রি করেন, যা পিটের জন্য ছিল একটি বড় সমস্যা। পিট অভিযোগ করেন, জোলি বেআইনিভাবে এস্টেটটি বিক্রি করেছেন, যার ফলে তাদের ওয়াইনারি ব্যবসার নিয়ন্ত্রণও চলে যায় জোলির হাতে।
সন্তানের ওপর প্রভাব
বিচ্ছেদের প্রক্রিয়া সন্তানের ওপর গভীর প্রভাব ফেলেছে, বিশেষ করে তাদের বয়স ১৬ থেকে ২৩ বছরের মধ্যে। বিনোদন সাংবাদিক জিন উলফ বলেন, “বিচ্ছেদ প্রক্রিয়ার দীর্ঘতা তাদের মনের ওপর এক বড় ছাপ ফেলেছে।” তবে, জোলি এবং পিট চেষ্টা করেছেন যাতে তাদের সন্তানেরা এই বিষয়টি যতটা সম্ভব কম অনুভব করেন।
শেষ পর্বের সমঝোতা
বিচ্ছেদ প্রক্রিয়ার দীর্ঘতার পর, অবশেষে ৮ বছরের আইনি লড়াই শেষে সমঝোতায় পৌঁছেছেন জোলি-পিট। জোলির আইনজীবী বলেন, “এটি একটি দীর্ঘ, ক্লান্তিকর প্রক্রিয়া ছিল, কিন্তু শেষ পর্যন্ত শান্তি ফিরে এসেছে।” এখন, যদিও এটি চূড়ান্ত হয়েছে, তবে পিট এবং জোলি তাদের ভবিষ্যতের সম্পর্ক নিয়ে খোলামেলা আলোচনার চেষ্টা করবেন বলে জানা গেছে।
এই দীর্ঘ আইনি লড়াই শুধু দুই তারকা নয়, বরং তাদের সন্তানদের জন্যও ছিল একটি কঠিন সময়। তবে তাদের বর্তমান অবস্থান, ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত এবং আইনি সমঝোতা এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হতে পারে।