বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের স্থাপনাগুলোয় স্পেস বরাদ্দ পাওয়া ব্যবসায়ীরা ভাড়া ও ইউটিলিটি বিল পরিশোধ করছেন না বছরের পর বছর। এ তালিকায় রয়েছেন বেসিসের অনেক সদস্য প্রতিষ্ঠান। এমনকি বেসিস থেকে সদ্য বিতাড়িত হওয়া অবৈধ প্রেসিডেন্ট রাশিদুল হাসানও ভাড়া না দেয়াদের মধ্যে অন্যতম একজন।
জানাগেছে, বেসিস ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী পলকের ক্ষমতার অপব্যাবহার করে আইসিটি বিভাগের হাই টেক পার্কের অধীনে কাওরানবাজারের জনতা টাওয়ার বা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্কে অফিস বরাদ্দ নেন সিসটেক ডিজিটাল। কিন্তু গত ১ বছরের বেশি সময় ধরে কোনো ভাড়া পরিশোধ করেনি রাশিদুল এর প্রতিষ্ঠান সিসটেক ডিজিটাল।
সূত্র বলছে, বিভিন্ন সময় হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষ তার কাছে ভাড়া চাইলে আওয়ামী লীগ সরকারের প্রভাব ব্যবহার করতেন তিনি। পলকঘনিষ্ঠ হওয়ায় হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের আগের প্রশাসন তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থাও নিতে পারেনি।
হাইটেক পার্ক থেকে দফায় দফায় ভাড়া পরিশোধ এর চিঠি পাঠালেও বেসিসের ক্ষমতা ব্যাবহার করে এসব চিঠিকে অগ্রাহ্য করেন রাশিদুল। বরং জনতা টাওয়ারের অন্যান্য ভাড়া বকেয়া রাখা প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে মিলে সিন্ডিকেট ও লিয়াজো করে হাইটেক পার্কের কর্মকর্তাদের হুমকি ও সময়ক্ষেপণ করে যাচ্ছেন প্রতিনিয়ত। এতদিন আওয়ামী লীগের দোসর ও সুবিধাভোগী হয়ে এখনও সক্রিয় তারা। সিসটেক ডিজিটাল এর কাছে হাই টেক পার্কের বকেয়া রয়েছে ১১৫৯২০৪ টাকা।
প্রসঙ্গত, সফটওয়্যার খাতের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) নতুন সভাপতি হয়েছেন সিসটেক ডিজিটাল লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) এম রাশিদুল হাসান। যদিউ পরে বানিজ্য মন্ত্রনালয় থেকে এই পদে আসীন হওয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠে এবং এটিকে অবৈধ বলছেন খাত সংশ্লিষ্টরা।
আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকার পতনের পর বেসিস সদস্যদের সংস্কারের দাবীর মুখে ১৭ অক্টবর পদত্যাগ করতে বাধ্য হয় পলকের সহযোগী ও দোসর রাসেল টি আহমেদ। কিন্তু কৌশলে রাসেলের অনুগত, আওয়ামী দোসর সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট রাশিদুলকে প্রেসিডেন্টের দায়িত্বে বসানো হয়।
ফ্যাসিস্ট হাসিনা পতনের আগে ব্যবসায়িদের সঙ্গে মিটিংয়ে সেই রাশিদুল হাসানসহ বেসিসের আরও কয়েকজন।
গত মে মাসে অনুষ্ঠিত বেসিসের ২০২৪-২৬ মেয়াদের নির্বাহী পরিষদের নির্বাচনে রাসেল টি আহমেদের নেতৃত্বাধীন পলকের মদদপুষ্ট ও ঘনিষ্ট লোকদের দিয়ে তৈরি‘ওয়ান টিম’ এর লিডার রাসেলের পরেই দ্বিতীয় সিনিয়র নেতা রাশিদুল। এ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে রাসেল টি আহমেদ তাকে বেসিসের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট বানায়। রাসেল পদত্যাগ করার পর প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেন রাশিদুল ।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারে অবস্থিত সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্কে স্পেস বরাদ্দ নেয়া ১৮টি প্রতিষ্ঠানের কাছে গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের শুধু মূল ভাড়া হিসেবেই পাওনা আটকে আছে ২ কোটি ৯৪ লাখ টাকার বেশি। প্রতিষ্ঠানগুলোর বিদ্যুৎ বিল বাকি ৫৬ লাখ ৬০ হাজার ৪৭৫ টাকা। পানির বিল বাকি রয়েছে ৭ লাখ ৯০ হাজার ৪২৯ টাকা। আর জেনারেটর বিল বাকি রয়েছে ১ লাখ ৪৭ হাজার ৩৫৮ টাকা। সব মিলিয়ে শুধু এক স্থাপনায়ই প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের পাওনা আটকে আছে ৩ কোটি ৬০ লাখ ৬৩ হাজার ৫৭২ টাকা।