পিলখানা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বিস্ফোরক আইনের মামলায় আড়াই শতাধিক আসামি জামিন পেয়েছেন। কেরাণীগঞ্জের কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থাপিত অস্থায়ী আদালতে রোববার শুনানি শেষে ঢাকার বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক ইব্রাহিম মিয়া এ রায় দেন।
আসামিদের পক্ষে আইনজীবীরা জামিনের আবেদন করেন। তাদের মধ্যে ছিলেন আমিনুল ইসলাম, মোহাম্মদ পারভেজ হাসান এবং ফারুক আহাম্মদ। রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি বোরহান উদ্দিন জামিনের বিরোধিতা করলেও আদালত আসামিদের পক্ষে রায় দেন।
বোরহান উদ্দিন জানান, “ঠিক কতজন জামিন পেয়েছেন তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে ধারণা করা হচ্ছে আড়াই শতাধিক আসামি জামিন পেয়েছেন। যেসব আসামি হত্যা মামলায় খালাস পেয়েছিলেন, তারাই জামিন পেয়েছেন।”
আসামিদের স্বজনরা সকাল থেকে কারাগারের মূল ফটকের সামনে অপেক্ষা করছিলেন। জামিনপ্রাপ্তদের মুক্তির প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন করার জন্য তাদের প্রার্থনা করতে দেখা গেছে।
এক নজরে পিলখানা হত্যাকাণ্ড
২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার পিলখানায় বিডিআরের সদরদপ্তরে সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্যদের বিদ্রোহের ঘটনায় ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাসহ মোট ৭৪ জন নিহত হন। এ ঘটনা দেশজুড়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করে এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়েও আলোড়ন তোলে। ঘটনার পর বিডিআরের নাম বদলে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) রাখা হয়। পরিবর্তন আনা হয় বাহিনীর পোশাকেও।
মামলার প্রেক্ষাপট
বিদ্রোহের ঘটনায় দুটি মামলা দায়ের হয়—একটি হত্যা এবং অন্যটি বিস্ফোরক আইনে। হত্যা মামলায় ২০১৩ সালে ১৫২ জনের মৃত্যুদণ্ড, ১৬০ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ২৫৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়। ২৭৮ জন আসামি খালাস পান। ২০১৭ সালে হাইকোর্টের রায়ে ১৩৯ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয় এবং আরও ১৮৫ জনকে যাবজ্জীবন সাজা দেওয়া হয়।
বিস্ফোরক আইনের মামলায় বিচার শুরু হয় ২০১০ সালে। কিন্তু হত্যা মামলার অগ্রাধিকার দেওয়ায় এই মামলা মাঝপথে স্থগিত হয়ে যায়। এতে ৮৩৪ জন আসামির বিরুদ্ধে বিচার ঝুলে যায়।
জামিনের পেছনের কারণ
বিস্ফোরক মামলায় হত্যা মামলার খালাসপ্রাপ্ত আসামিদের মুক্তি আটকে ছিল। এ প্রেক্ষাপটে আদালত তাদের জামিন মঞ্জুর করেন। তবে রাষ্ট্রপক্ষ জামিন আদেশের বিরোধিতা করে এ বিষয়ে উচ্চ আদালতে আপিলের পরিকল্পনা করছে।