আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংস্কার ও আধুনিকীকরণ নিয়ে নানা আলোচনা শুরু হয়েছে। বিশেষ করে পুলিশের পোশাক পরিবর্তন নিয়ে জনমত সৃষ্টি হওয়ার পর, বর্তমান সরকার পুলিশের ইউনিফর্ম ও পোশাকের বিষয়ে এক ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ২০ জানুয়ারি সোমবার, সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির সভায় পুলিশ, র্যাব ও আনসার বাহিনীর নতুন পোশাক চূড়ান্ত করা হয়েছে।
সভায় উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.), যিনি বলেন, পোশাক পরিবর্তনের পাশাপাশি বাহিনীর সদস্যদের মানসিকতায়ও পরিবর্তন আনতে হবে। এর পাশাপাশি, সভায় বিজিবির জন্য সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ারশেল কেনার অনুমোদনও দেয়া হয়। এতে পরিষ্কারভাবে বোঝা যায় যে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আধুনিকীকরণের পথে আরও অনেক পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
এটি একটি উল্লেখযোগ্য সিদ্ধান্ত, কারণ এটি পুলিশ বাহিনীর কাজের পরিবেশ ও মানসিকতা, দুটোই পরিবর্তন করতে ইঙ্গিত দেয়। বিশেষ করে, পুলিশ বাহিনীর কর্মীদের মধ্যে অনেকেই পুরনো ইউনিফর্ম পরে কাজ করতে অনাগ্রহী হয়ে পড়েছেন, যা এই পরিবর্তনের মূল কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে। গত ১১ আগস্ট সাবেক স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন জানিয়েছিলেন, পুলিশের ইউনিফর্ম ও লোগো পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। তিনি বলেছিলেন, পুলিশের বর্তমান ইউনিফর্ম অনেকের মন ভেঙে দিয়েছে এবং তা পরিবর্তন করা খুবই জরুরি।
এদিকে, এই পরিবর্তন শুধু পোশাকের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং পুলিশের কাঠামোগত পরিবর্তনও হতে পারে। সাবেক স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন আরও বলেন, পুলিশ কমিশন প্রতিষ্ঠিত হলে, পুলিশ বাহিনী কোনো রাজনৈতিক দলের অধীনে থাকবে না। এতে পুলিশকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করা যাবে না, যা গণতন্ত্র ও আইনের শাসনের পক্ষে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ধরনের পদক্ষেপ পুলিশ বাহিনীর মান উন্নয়ন ও জনগণের আস্থার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে সাহায্য করবে। পুলিশের আধুনিকীকরণ এবং পুরনো প্রথা থেকে বেরিয়ে আসা শুধু বাহিনীর ইমেজ পুনর্নির্মাণ করবে না, বরং পুরো দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নত করতে সহায়ক হবে।
এদিকে, নতুন ইউনিফর্মের পেছনে নকশা ও চিহ্নিত পোশাক নির্বাচন প্রক্রিয়া প্রাথমিকভাবে সম্পন্ন হয়েছে। জানা গেছে, ইতোমধ্যে পুলিশ, র্যাব ও আনসারের প্রতিনিধিরা ১৮টি নতুন পোশাক পরিধান করে বৈঠকে অংশগ্রহণ করেছেন। সেখান থেকে চূড়ান্ত পোশাক নির্বাচন করা হবে। এটি পুলিশের কার্যক্ষমতা এবং বাহিনীর সদস্যদের মনোবল বৃদ্ধির জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
এই পরিবর্তন এবং সংস্কারের পেছনে সরকারের দৃঢ় ইচ্ছাশক্তি এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় দৃঢ় প্রতিজ্ঞা প্রতিফলিত হচ্ছে, যা একটি সুস্থ, শক্তিশালী এবং আধুনিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জন্য অপরিহার্য।