রাজধানীর মিরপুরের বাসিন্দা জাহিদ (ছদ্মনাম) পেশায় ফ্রিল্যান্সার। সম্প্রতি ফেসবুকে তার সঙ্গে এক তরুণী যুক্ত হন। এরপর উভয়ের মধ্যে প্রথমে কথোপকথন হয়, পরে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের একপর্যায়ে নিয়মিত ভিডিওকলে কথা বলতে থাকেন তারা। এভাবে কথা বলার সময় ওই তরুণী গোপনে জাহিদের আপত্তিকর ছবি ও ভিডিও ধারণ করে রাখেন। পরে এসব দৃশ্য অনলাইনের বিভিন্ন মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেন এবং মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করেন।
জানা গেছে, এভাবে সুন্দরী তরুণীদের ছবি ব্যবহার করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আইডি তৈরি করে তরুণ, বিশিষ্টজন ও উচ্চ শ্রেণির ব্যক্তিদের টার্গেট করছে সাইবার প্রতারক চক্র। তারা ভুক্তভোগীর অজান্তেই অন্তরঙ্গ মুহূর্তের অশ্লীল, আপত্তিকর ছবি ও ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে জিম্মি করছে। পরে তাদের কাছ থেকে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। সম্প্রতি এমন সাইবার প্রতারক চক্রের তৎপরতা বেড়েছে। যদিও ভুক্তভোগীদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে বছরজুড়েই গ্রেফতার করা হচ্ছে এমন অপরাধীদের।
সম্প্রতি এ চক্রের হাতে প্রতারিত হয়ে ভুক্তভোগী জাহিদ থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। পর ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সাইবার দলের দ্বারস্থ হন। জাহিদ যুগান্তরকে বলেন, চক্রের ওই নারী সদস্য প্রথমে তিন হাজার টাকা নেন। এরপর আরও টাকা দাবি করেন। পরে দুই হাজার টাকা পাঠাই। এরপর ডিবি পুলিশের কাছে অভিযোগ করার পর কেউ আর টাকা দাবি করেনি।
ডিবির সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের (দক্ষিণ) অতিরিক্ত উপকমিশনার মাহমুদুল হাসান বলেন, অধিকাংশ ক্ষেত্রে মূল হোতাদের অবস্থান ভারতে পাওয়া গেছে। যারা বাংলাদেশিদের টার্গেট করে এমন ফাঁদ পেতে প্রতারণা করে আসছে। এজন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপরিচিত কারও সঙ্গে বন্ধুত্ব করার ক্ষেত্রে সাবধান থাকতে হবে। বন্ধুত্বের অনুরোধ গ্রহণ করার আগে পরিচিত কিনা তা নিশ্চিত হতে হবে। অপরিচিত ব্যক্তির সঙ্গে কথোপকথন ও তথ্য শেয়ারের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে। একান্ত ব্যক্তিগত কোনো কিছু ফেসবুকে শেয়ার করা যাবে না।
ঢাকা মহানগর পুলিশের তথ্য বলছে, ২০২০ সালের জুলাই থেকে সাইবার অপরাধে ৪২টি, ২০২১ সালে ২০৬টি, ২০২২ সালে ১৭৮টি, ২০২৩ সালে ১৭০টি, ২০২৪ সালের মার্চ পর্যন্ত ৩১টি মামলা হয়েছে। মোট ৬২৮টি মামলার মধ্যে ২৫০টি হয়েছে মোবাইল ব্যাংকিং প্রতারণা ও অনলাইন মাধ্যম ব্যবহার করে প্রতারণার। পর্নোগ্রাফি ধারণ ও অনলাইন হ্যারেসমেন্টে ১২৩টি, মানহানিকর বক্তব্য প্রচার বা মিথ্যা তথ্য প্রচারে ১১২টি, ফেসবুক হ্যাকিং বা অন্যান্য হ্যাকিংয়ের ৪০টি মামলা হয়েছে। এছাড়া সাইবার অপরাধের অন্যান্য কারণ উল্লেখ করে মামলা হয়েছে ১০৩টি।
পুলিশ জানিয়েছে, অন্যান্য মেসেজিং অ্যাপের মতো হোয়াটসঅ্যাপেও বিভিন্ন প্রতারক চক্র বিদেশি নম্বর ব্যবহার করে ভিডিও কল দিয়ে ব্যক্তির ছবি সংগ্রহ করে। তারপর সেই ছবি দিয়ে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) সফটওয়্যার ব্যবহার করে অশ্লীল ভিডিও বানিয়ে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে।